কক্সবাজারের চকরিয়ায় নূর তাজ নামের ৪৪ মাস বয়সের এক শিশুকে ধর্ষণের পর গলা টিপে হত্যা করার মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। এর পর লাশ গুম করার চেষ্টা ও ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ধর্ষক শিশুটিকে বাড়ির কাছের পুকুরে ফেলে দিলে লাশ ভাসতে থাকে। পরে শিশুটির মরদেহ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ।
পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ জঙ্গলকাটাস্থ ধর্ষকের বসতবাড়ির উত্তর পাশে সংঘটিত এই ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করে শিশুর মা নাজমা বেগম। তবে সেই শিশুর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি উঠে আসায় সোমবার (২ আগস্ট) থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করেছেন শিশুর বাবা আঞ্জু মিয়া। এর পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। গ্রেপ্তার শিশুধর্ষক ও খুনির নাম দুলাল মিয়া (২২)।
সে একই এলাকার মো. আবু তাহেরের ছেলে। চকরিয়া থানার অপারেশন অফিসার (উপ-পরিদর্শক) রাজীব চন্দ্র সরকার  জানান, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নিখোঁজ হয় শিশুটি। এর ছয় দিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টার দিকে শিশু নূর তাজের লাশ পার্শ্ববর্তী আবুল হাসেমের পুকুরে ভাসতে দেখে খবর দিলে পুলিশ ভাসমান অবস্থায় শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। এরপর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় পর শিশুটির ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদনে উঠে আসে শিশুটিকে প্রথমে ধর্ষণ, এরপর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। চকরিয়া থানার ওসির দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জুয়েল ইসলাম জানান, অবশেষে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী শিশু নূর তাজকে ধর্ষণ, শ্বাসরোধে হত্যা ও লাশ গুম করার অপচেষ্টার ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনার মূল হোতা দুলাল মিয়াকেও পুলিশ ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে।
ঘটনার বিষয়ে পুলিশ তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদও করছে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। থানায় দায়েরকৃত নিয়মিত মামলার এজাহারে বাদী কৃষক আঞ্জু মিয়া উল্লেখ করেছেন, আসামি সম্পর্কের তাঁর (বাদীর) ভাগিনা হয় এবং উভয়ের বাড়ি একই স্থানে। ঘটনার দিন দুপুরে তার শিশু কন্যা নূর তাজ বাড়ির ছোট শিশুদের সঙ্গে খেলা করছিল। কিন্তু এর পর থেকে মেয়েটি নিখোঁজ হয়ে পড়ে। এর ছয় দিন পর শিশুটির লাশ ভাসমান অবস্থায় দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে পুলিশ খবর পেয়ে মেয়ের লাশ উদ্ধার এবং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। কিন্তু ঘটনার মূল হোতা ভাগ্নে দুলাল মিয়া এর পর থেকে আত্মগোপনে চলে যায়।
পরে সে এলাকায় ফিরে আসে। এ ব্যাপারে পুলিশের চকরিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. তফিকুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথমে অপমৃত্যু মামলা নেওয়া হলেও শিশুটির ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ধর্ষণ এবং শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনার বিষয়টি উঠে এসেছে। তাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং আলামত নষ্ট তথা শিশুটিকে গুম করার চেষ্টার অপরাধে নতুন করে মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনায় গ্রেপ্তার মূল হোতার বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।’